টেসলার ওয়্যারলেস ইলেক্ট্রিসিটির যুগে প্রবেশ করছে বিশ্ব!
১৮৮২ সালে নিউ ইয়র্কের পার্ল পাওয়ার স্টেশনে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের একমাত্র উপায় ছিল তারযুক্ত সংযোগ। কিন্তু বর্তমান যুগে এটি সবসময়ের জন্য কার্যকর নয়। অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা মহাকাশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তার ব্যবহার সম্ভব নয়। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা এবং এর সরবরাহের সহজলভ্যতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই, তার ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি নতুন পদ্ধতি নিয়ে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন। এই প্রযুক্তির নাম ‘পাওয়ার বিমিং’। এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীরা মাইক্রোওয়েভ, রেডিওওয়েভ এবং লেজারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা প্রথম এই ধারণা দেন, যেখানে তিনি পৃথিবীর আয়নোস্ফিয়ার ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সংযোগের একটি পদ্ধতি প্রস্তাব করেছিলেন। যদিও তার সেই গবেষণা বাস্তবে রূপ পায়নি, তবে তারহীন বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণা থেমে থাকেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রযুক্তির উন্নতি ঘটে। ১৯৬৪ সালে মার্কিন প্রকৌশলী উইলিয়াম সি. ব্রাউন মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাঠিয়ে একটি ছোট হেলিকপ্টার ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত চালাতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে, ১৯৭৫ সালে নাসার বিজ্ঞানী রিচার্ড ডিকসন ৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ এক মাইল দূরে পাঠাতে সক্ষম হন, যদিও এর কার্যকারিতা তখনো পর্যাপ্ত ছিল না।
কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে বর্তমানে এটি বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। কম্পিউটার, ফটোভোল্টেইক প্রযুক্তি, লেজার এবং ট্রানজিস্টরের উন্নতি পাওয়ার বিমিংকে আরও কার্যকর করে তুলছে। বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে এই প্রযুক্তির গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে নিউজিল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি EMROD বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে সরাসরি মাইক্রোওয়েভে বিদ্যুৎ পাঠিয়ে এটি রূপান্তরের একটি পদ্ধতি চালু করছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের Reach Power রেডিওওয়েভের মাধ্যমে ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে। এই প্রযুক্তি বর্তমানে সামরিক খাতে এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপান এই প্রযুক্তিতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে। বিশেষ করে, জাপানের মহাকাশ সংস্থা JAXA ২০৩০ সালের মধ্যে মহাকাশ থেকে তারহীন বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে স্বল্প বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়েছে, যেমন স্মার্ট সেন্সর, মোশন ডিটেক্টর এবং সুপারমার্কেটের স্মার্ট ডিসপ্লে। ধীরে ধীরে এটি বৃহৎ পরিসরে ব্যবহৃত হবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শীঘ্রই এটি বাস্তবে পরিণত হবে এবং ভবিষ্যতে তারহীন বিদ্যুৎ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠবে।
0 মন্তব্যসমূহ